সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করুন নতুন নিয়মে


লেখকঃ এডমিন, লার্নিং এন্ড ট্রাভিলিং গ্রুপ
তারিখঃ ০৯ অক্টোবর ২০২৪

ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে সেন্টমার্টিন একটি আবেগ এবং ভালোবাসার নাম। বর্ষা মৌসুম শেষে শীতের শুরু থেকে সবারই আগ্রহ থাকে কখন থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের জাহাজ চলবে। এই লেখাটিতে আলোচনা করবো চলতি বছরে কবে থেকে সেন্টমার্টিনের জাহাজ চলবে, রেজিস্ট্রেশন করতে হবে কি'না, ভাড়ার পরিমাণ কেমন হবে, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ইত্যাদি।

সেন্টমার্টিনের বর্তমান অবস্থাঃ

সম্প্রতি সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রমণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।

সবারই মনে এখন একই প্রশ্ন সেন্ট মার্টিন যেতে কি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে কি'না? সহজ করে বলি এখনই রেজিস্ট্রেশন এর বিষয়টি কার্যকর হচ্ছে না। নভেম্বরের ১ তারিখ হতে টেকনাফের জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে জাহাজগুলো ছেড়ে যাবে। ভ্রমণপিপাসু মানুষকে নিরুৎসাহিত করার জন্য ভাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। তবে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়নি। অর্থাৎ আপনারা চাইলেই নভেম্বরে ঘুরে আসতে পারেন নারিকেল জিঞ্জিরা খ্যাত সেন্ট মার্টিন থেকে।



ঢাকা টু টেকনাফ যাওয়ার উপায়ঃ

সেন্ট মার্টিন যেতে হলে প্রথমেই আমাদের পৌছাতে হবে টেকনাফ। ঢাকা থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে টেকনাফ যাওয়া যায়। তবে সহজ এবং অল্প খরচে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো বাস। আপনারা চাইলে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে কক্সবাজার পৌছে, সেখানে একদিন বা দু্ইদিন ঘুরাঘুরি করেও টেকনাফ যেতে পারেন। যে বাসগুলো সরাসরি ঢাকা থেকে টেকনাফ যায় সেগুলোর তালিকা, ভাড়ার তালিকা এবং যাত্রার সময় নিচে দেখে নিন। আপনারা যত সকালে টেকনাফ পৌছাতে পারবেন ততই আপনাদের জন্য ভালো হবে। টেকনাফ পৌছেই জাহাজের টিকেট কেটে নিবেন।

ঢাকা টু টেকনাফগামী বাসের নাম, সময় ও ভাড়ার তালিকাঃ

ঢাকা থেকে বাসগুলো বিভিন্ন সময়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়! আপনাদের জন্য পরামর্শ হলো সন্ধ্যা আটটার মধ্যে যে বাসগুলো টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় সেগুলোকে বেছে নিন যাতে সকাল আটটার মধ্যে টেকনাফ পৌছাতে পারেন। নিচে বাসের নাম এবং ভাড়ার তালিকা দেখে নিন-



জাহাজের নাম সময়সূচি, এবং টিকিটের মূল্য

সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জাহাজ সকাল ৯ টায় টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়! জাহাজের কোয়ালিটি এবং সিটের ধরণ অনুযায়ী টিকিটের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন হয়। আপনাদের জন্য পরামর্শ হলো পরিবার নিয়ে গেলে রাউন্ড ট্রিপের টিকেট কাটবেন। চাইলে অনলাইনে আগেই টিকেট কেটে রাখতে পারেন। সিট না পেলে মন খারাপ করবেননা কারণ জাহাজে উঠার পর কেউ আর সিটে বসে থাকেনা, সবাই সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জাহাজের নাম, সময়সূচি, এবং টিকিটের মূল্যসহ বিস্তারিত দেখে নিন।

Keari Cruise and Dine




Keari Sindbad





এমভি বার আউলিয়া



সমুদ্রের সৌন্দর্যঃ 

জাহাজটি যখন নাফ নদী অতিক্রম করবে তখন আপনারা একই সাথে মিয়ানমার সীমান্ত এবং টেকনাফের সর্বশেষ সীমান্ত দেখতে পাবেন। নাফ নদীতে শাহপরীর দ্বীপ জেটি, টেকনাফের বাংলাদেশ-মিয়ানমার জেটি, টেকনাফ সড়ক ও জনপথের নদী নিবাস রেস্ট হাউজ ও জেটি, পরিবেশ অধিদপ্তরের জেটি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ট্রানজিট পয়েন্টসহ বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা রয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং গাইডলাইন নিয়ে আমার একটি চমৎকার ভিডিও রয়েছে। নিচের লিংকটি ব্যবহার করে ভিডিওটি দেখতে পারেন।



সেন্টমার্টিন ভ্রমণের নতুন নিয়মঃ

আগের তুলনায় সেন্টমার্টিন ভ্রমণ এখন কিছুটা জটিল এবং কড়াকড়ি। বিশেষ করে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষা এবং সামুদ্রিক পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এখন জাহাজে আপনাকে কোন রকম প্লাসিকপণ্য নিয়ে যেতে দিবেনা। সেটা চিপস, পানির বোতল বা পলি ব্যাগ যাই হোকনা কেন! জাহাজে উঠার আগেই সেগুলো চ্যাকিং করা হবে।

সমুদ্রের সৌন্দর্যঃ

সমুদ্রে আগে জাহাজ চলাচলের শরুতে অসংখ্য সীগাল এর দেখা মিলত। কিন্তু বর্তমানে সেগুলো আগের মতো আর দেখা যায়না। কেননা আগে মানুষজন এইসকল পাখিদের চিপসসহ বিভিন্ন খাবার সমুদ্রে ছুড়ে দিত। মূলত এই কারণেই এই পাখিগুলো জাহাজের পেছন পেছন ছুটতো। তাছাড়াও জীব বৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পেছনেও এই চমৎকার সামুদ্রিক সীগালগুলো বিলুপ্তির একটা কারণ হতে পারে। সামুদ্রিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে দুপুর ১২ টার মধ্যে আপনারা পৌছে যাবেন সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে।

সেন্টমার্টিনের হোটেলসমূহঃ

সেন্টমার্টিনে অসংখ্য ছোট-বড় বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। পরামর্শ থাকবে রাশ সময় ব্যতীত আপনারা সেন্টমার্টিনে গিয়েই হোটেল খুজে বুকিং করুন। এতে অল্প টাকায় ভালো মানের হোটেল পাবেন। চেষ্টা করবেন সেন্টমার্টিনের ভিতরের অংশে উত্তর বা দক্ষিণ পাড়ায় থাকতে। তাহলে সমুদ্রের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আপনারা চাইলে "শান্তিনিকেতন রিসোর্টে' থাকতে পারেন। অসম্ভব সুন্দর একটা রিসোর্ট যেখান থেকে আপনারা ভাটার সময় পায়ে হেটে দারুচিনি দ্বীপ যেতে পারবেন।

সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্যঃ

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হলো সেন্টমার্টিন। যার চারপাশে সাগর আর আকাশের নীল মিলেমিশে একাকার। খোলা-মেলা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত আর সমুদ্রের বিরামহীন গর্জন যেন নীল রঙের রাজ্যে পরিণত করেছে সেন্টমার্টিনকে। প্রকৃতি দুই হাত মেলে যেন সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে।

ছেড়াদ্বীপঃ

সেন্টমার্টিন থেকে ভাটার সময় পায়ে হেটে আপনারা ছেড়াদ্বীপ ভ্রমণ করতে পারেন। এটি আপনাদের একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এনে দিবে। এই সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও দেখতে পারেন নিচের লিংকে ক্লিক করে।



খাওয়া দাওয়া

সেন্টমার্টিনে বিভিন্ন মানের ছোট বড় অসংখ্য খাবারের হোটেল রয়েছে। চাইলে আপনারা রিসোর্টেও খাবার খেতে পারেন। তবে খাবারের মেন্যু এবং দাম সম্পর্কে আগেই আলোচনা করে নিবেন। যেতেতু প্রায় সকল খাবারের হোটেলই সেন্টমার্টিন বাজার বা জেটি ঘাটের আশেপাশে তাই পরামর্শ হলো ভিতরের দিকে থাকলে রিসোর্টেই খাবারের ব্যবস্থা করবেন।

Activities

সেন্টমার্টিনে আপনি সাইক্লিং করতে পারেন। হুমায়ূন আহমেদের বাড়িসহ ছেড়াদ্বীপ, দারুচিনির দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারেন। রাতের সমুদ্র ভয়ংকর সুন্দর। মিস করবেননা।

পরামর্শ

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় কেউ প্লাস্টিক পণ্য সমুদ্রে ফেলবেননা।

________________________________________________________________________________________________________
লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে পারেন এবং এইরকম গোছানো নতুন নতুন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে আমাদের YouTube চ্যানেল- 
Learning and Traveling ক্লিক করে Subscribe করতে পারেন। কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.