Radian Fish World, Cox's Bazar - রেডিয়ান ফিস ওয়াল্ডসহ একদিনে কক্সবাজারে যা যা ঘুরে দেখবেন- সম্পূর্ণ গাইডলাইন

লেখকঃ এডমিন, লার্নিং এন্ড ট্রাভিলিং গ্রুপ
তারিখঃ ১২ অক্টোবর ২০২৪
কক্সবাজারে গেলেন, কলাতলী বীচ, সুগন্ধা বীচ এবং লাভনী বীচ দেখলেন--- মানেই কিন্তু আপনার কক্সবাজার ট্যুর শেষ নয়! আপনি কি জানেন, কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্রেই মাত্র ২৫০ টাকার টিকেটে জীবন্ত সামুদ্রিক মাছ দেখা যায়? না জানলে চলুন জেনে নেই। পাশাপাশি জানবো মাত্র ১ দিনের পরিকল্পনায় কিভাবে কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দর স্থানগুলো ঘুরে দেখবেন।

সারাংশঃ

কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে মাত্র 10 টাকা আটো ভাড়া দিয়ে ২৫০ টাকার টিকেটে ঘুরে দেখতে পারেন ১০০ টিরও বেশি সামুদ্রিক জীবন্ত মাছ! এই আলোচনায় সামুদ্রিক সকল মাছের পরিচিতির পাশাপাশি কিভাবে অল্প টাকায় রেডিয়ান ফিস ওয়াল্ডের টিকেট কিনবেন, কিভাবে যাবেন, কি কি টেকটিক ফলো করে একদিনেই কক্সবাজার ঘুরে দেখবেন সেসকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন, আশা করছি ইনশাআল্লাহ্ অনেক অজানা তথ্য জেনে যাবেন।

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড ঃ

বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র, প্রাকৃতিক  সম্পদ ও শক্তির উৎস বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে করে তুলেছে অপার সম্ভাবনার এক দেশ।

সমুদ্রের উপরিভাগের দৃশ্য দেখে মানুষ যথটা মুগ্ধ হয়, সমুদ্রের গভীরের অদেখা জগৎ ও সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র দেখলে নিশ্চয়ই তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হবার কথা। কক্সবাজারের রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড পর্যটকদের জন্য এই অপার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

রেডিয়ান ফিস ওয়াল্ডে রয়েছে হরেক রকমের অক্টোপাস, শামুক, হাঙ্গর, কাঁকড়া, চিংড়ি, জেলিফিশ সহ জানা-অজানা অসংখ্য  আকর্ষণীয় মৎস্য ও সামুদ্রিক জীব। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে সাধন লোনা পানির নতুন নতুন বিচিত্র প্রজাতির মাছ ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের ছোঁয়া। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একুরিয়ামটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ভ্রমণপিপাঁসু সমুদ্র প্রেমেদীর কাছে ব্যাপক আগ্রহের কারণ হিসেবে পরিণত হয়েছে।

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়াল্ডের নিমার্ণ ব্যয়ঃ

সমুদ্র তলদেশের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগের লক্ষ্যে রেডিয়েন্ট ফিস ওয়াল্ডটি ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এতে আছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির পাখি, শিশুদের খেলার জায়গা, ছবি তোলার আকষর্ণীয় সুযোগ, ডিজিটাল কালার ল্যাব, কেনা কাটা করার জন্য শপ এবং ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি বার-বি-কিউ করার সুযোগ। তবে এসকল বিষয় আপনার টিকেট মূল্যের ভিতর অন্তরভুক্ত নয়, এগুলো উপভোগের জন্য আপনাদের নির্ধারিত টাকা দিয়ে টিকেট ক্রয় করতে হবে।

থ্রি নাইন ডি মুভি দেখার জন্য টিকেট মূল্য ৫০ টাকা; শিশুদের কিডস জোনের টিকেট মূল্য ১৫০ টাকা; বারবিকিউ করতে চাইলে খরচের বিষয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে। তাছাড়াও ৩ তলায় কিডস জোনের পাশে সফট ড্রিংস, এবং ফাস্ট ফুডের ব্যবস্থা আছে। এগুলোর খাবার মূল্য বেশি, তাই পরামর্শ হলো আপনি পুরো ফিসওয়াল্ড ঘুরে দেখুন। খাবার খাওয়ার জন্য এবং কেনাকাটা করার জন্য চলে যান ২০  টাকা অটো ভাড়া যোগে বারমিজ মার্কেট। সেখানে আপনি অল্প টাকায় মায়ানমারের বার্মিজ পণ্য যেমন- কাপড়, জুতো এবং কসমেটিক্স পেয়ে যাবেন । পাশাপাশি যারা সুটকি কিনতে চান, তারাও পেয়ে যাবেন সামুদ্রিক সকল প্রকার সুটকি। পরমর্শ হলো, সুটকি ক্রয়ের জন্য কাচাবাজার চলে যান, সখানে লবণ ছাড়া অর্গানিক সামুদ্রিক মাছের সকল সুটকি পেয়ে যাবেন। 

কথা না বাড়িয়ে চলুন সামুদ্রিক মাছগুলোর পরিচয় সম্পর্কে জেনে আসি এবং তারপরই আলোচনা করবো ১ দিনের ট্যুর পরিকল্পনায় কক্সবাজারের কলাতলী বীচ, সুগন্ধাবীচ, মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি পাহাড়, হিমছড়ি ঝর্ণা, হিমছড়ি বীচ, দরিয়ানগর প্যারাসাইক্লিং পয়েন্টসহ কিভাবে রেডিয়েন্ট ফিস ওয়াল্ড ঘুরে দেখবেন।


জায়েন্ট গৌরামি বা দৈত্য গৌরামি হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিঠা পানির আবাসস্থলে বেড়ে উঠা একটি প্রজাতি। এটা অ্যাকোয়ারিয়াম বাণিজ্যে জনপ্রিয় হলেও খাবার হিসেবে বেশ সুস্বাধু। এই মাছটি আর্দ্র বাতাসে শ্বাস নিতে সক্ষম, তাই দীর্ঘ সময়ের জন্য পানির বাইরে বেঁচে থাকতে পারে। এটি আকারে সর্বাধিক ৭০ সেমি বৃদ্ধি পায়, যদিও বেশিরভাগ মাছই প্রায় ৪৫ সেমি দীর্ঘ হয়।


Gagora Catfis হল Ariidae পরিবারের সামুদ্রিক ক্যাটফিশের একটি প্রজাতি । ১৮২২ সালে ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিল্টন দ্বারা এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই  প্রজাতি বাংলাদেশ , মায়ানমার এবং ভারতের গ্রীষ্মমন্ডলীয় সামুদ্রিক, লোনা ও স্বাদু পানিতে পাওয়া যায় । এটি সর্বোচ্চ ৯১.৪ সেমি দৈর্ঘ্য পর্যন্ত লম্বা হয়।


ব্লাড প্যারট সিচলিড এক প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ । এটি ১৯৮৬ সালের দিকে তাইওয়ানে প্রথম প্রজনন করা হয়েছিল। এই মাছের প্রাকৃতিক রং লাল, হলুদ এবং ধূসর। এই মাছটি আকারে ছোট হলেও দেখতে অনেক সুন্দর।


ব্ল্যাক কার্প মিঠা পানির এক প্রজাতির মাছ। এটি পূর্ব এশিয়ার হ্রদ এবং বিভিন্ন নদীতে প্রথম পাওয়া যায়।  তাছাড়াও  চীন জুড়ে আমুর বেসিন থেকে ভিয়েতনাম পর্যন্ত এই মাছের বিচরণ রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠে। বাংলাদেশের সাগরেও এই মাছের দেখা মিলে।  একটি কালো কার্পের সাধারণ দৈর্ঘ্য ৬০-১২০ সেন্টিমিটার; তবে এটি ৬ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্য এবং ১০৯ কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে।


স্টটেড গার (
Stooed Gar) উত্তর আমেরিকার একটি স্বাদু পানির মাছ।  যার মাথা, পাখনা এবং শরীরে প্রচুর কালো দাগ রয়েছে। কালো দাগযুক্ত সবচেয়ে ছোট স্টটেড গার ২-৩ ফুট পযর্ন্ত লম্বা হয় এবং সাধারণত ১.৮-২.৭ কেজি পযর্ন্ত ওজনের হয়।


গোল্ডফিস মিঠা পানির একটি মাছ। এটি সাধারণত ইনডোর অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ হিসাবে রাখা হয় এবং এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকোয়ারিয়াম মাছগুলির মধ্যে একটি । তবে এটি বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায়না। মূলত অষ্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে এর সবচেয়ে বেশি দেখা মিলে।


টিনফয়েল বার্ব পুঠি মাছের মতো দেখতে মনে হলেও, এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিঠা পানির মাছ । এই প্রজাতিটি মূলত ১৮৫৩ সালে পিটার ব্লিকার দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছিল। এটি বারবোডস এবং পুন্টিয়াস বংশের মধ্যেও স্থান পেয়েছে। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ।


টেরাপন জারবুয়া , জারবুয়া টেরাপন , ক্রিসেন্ট পার্চ , স্পাইকি ট্রাম্পেটর , থর্নফিশ বা টাইগার পার্চ, সবই মূলত একই মাছ যা অধিকাংশ মানুষ ক্রিসেন্ট গ্র্যান্টার নামে চেনে।  এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলর মিঠা পানির মাছ। এটি  অ্যাকোয়ারিয়াম বাণিজ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি মাছ। আকারে ছোট হলেও দেখতে বেশ সুন্দর এই মাছ।


ম্যানগ্রোভ রেড স্ন্যাপার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। কোরাল মাছের মতো দেখতে মনে হলেও এটির বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক রেঞ্জে  এবং সম্প্রতি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে দেখা গিয়েছে। এই মাছটি সর্বোচ্চ ৪.৯ ফুট  দৈর্ঘ্যের হতে পারে। এটি অত্যন্ত স্বুসাদু একটি মাছ।


Shark বা হাঙ্গর সবার কাছেই সুপরিচিত একটি সামুদ্রিক মাছ যা ইলাসমোব্র্যাঞ্চ মাছের একটি প্রজাতি।

এটি এমন একটি ভয়ানক মাছ যার একটি কার্টিলাজিনাস কঙ্কাল , মাথার পাশে পাঁচ থেকে সাতটি ফুলকা চিরা এবং পেক্টোরাল ফিন থাকে যা দারা সহজেই এই মাছ অন্য প্রাণীকে আক্রমণ করতে পারে। প্রাচীনতম হাঙ্গরগুলি প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রারম্ভিক জুরাসিক থেকে পরিচিত। যাইহোক একটি হাঙর সর্বোচ্চ ৪০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এরা সমুদ্রে সাধারণ ৬৬০০ ফুট গভীরতায় থাকে। তবে বঙ্গোপসাগরে এই প্রজাতির মাছের দেখা মেলেনা।


রেটিকুলেট হুইপ্রে বা মধুচক্র স্টিংগ্রে এক প্রকারের সামুদ্রিক মাছ। এটি লোহিত সাগর, নাটাল এবং আরব সাগর সহ পশ্চিম ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় জলে বাস করে। এটি সর্বোচ্চ ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

১ দিনের পরিকল্পনায় যেভাবে কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দর স্থানগুলো ঘুরে দেখবেনঃ

১ দিনের ভ্রমণে সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত কলাতলী এবং সুগন্ধা বীচ ঘুরে দেখতে পারেন।দুপুর ১ টার মধ্যে লাঞ্চ শেষ করে মেরিন ড্রাইভের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অটো রিজার্ভ করে বেরিয়ে পড়ুন।

প্রথমবার কক্সবাজার ভ্রমণ করলে এই পথে আপনি দেখতে পারেন দরিয়ানগর প্যারাসাইক্লিং পয়েন্ট, হিমছড়ি পাহাড় এবং হিমছড়ি বীচ। এই তিনটি স্থানই অসম্ভব সুন্দর। এর বেশি দেখার সময় পাবেননা। বিকালে হিমছড়িতে সূর্যাস্ত দেখে সন্ধ্যা ৬.৩০ টার মধ্যে কক্সবাজার ফিরে আসুন।

সন্ধ্যা ৭-৮.৩০ পর্যন্ত কক্সবাজারের ঝাওতলায় অবস্থিত চমৎকার রেডিয়ান ফিস ওয়াল্ডটি ঘুরে দেখতে পারেন। পর্যটকদের উপস্থিতি থাকলে রেডিয়ান ফিস ওয়াল্ড রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

কম খরচে টিকেট কোথায় পাবেন?

আপনি যে হোটেল এ থাকবেন রেডিয়ান ফিস ওয়াল্ড এর টিকেট কম খরচে তাদের কাছ থেকেই পাবেন। তারা আপনাকে ২৫০ টাকায় টিকেট অফার করবে যা রেডিয়ান ফিস ওয়াল্ড এ গেলে ৩০০ টাকা। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে বারগেইন করে এর চেয়ে কম মূল্যেও টিকেট পেতে পারেন। আমরা ২২০ টাকা করে টিকেট পেয়েছিলাম।________________________________________________________________________________________________________
লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে পারেন এবং এইরকম গোছানো নতুন নতুন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে আমাদের YouTube চ্যানেল- 
Learning and Traveling ক্লিক করে Subscribe করতে পারেন। কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে।


No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.