কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসুন চমৎকার শাহপরীর দ্বীপ


লেখকঃ এডমিন, লার্নিং এন্ড ট্রাভেলিং গ্রুপ
তারিখঃ ১২ অক্টোবর, ২০২৪

শাহপরীর দ্বীপঃ
কক্সবাজারের কলাতলী পয়েন্ট থেকে শাহপরীর দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ১০৩ কিলোমিটার। এটি মূলত টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত একটি সামুদ্রিক দ্বীপ। অনেকের কাছেই এই দ্বীপটি অপরিচিত। আবার কারো কারো কাছে এই দ্বীপটি ভ্রমণ তীব্র আক্ষেপের। বিশেষ করে যারা বারংবার কক্সবাজার গিয়েছেন এবং সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন তাদের কাছে।

সেন্টমার্টিন যাবার পথে টেকনাফ জেটিঘাট থেকে সমুদ্রে প্রবেশের শুরুতেই পশ্চিম পাশে যে দ্বীপটি সবার চোখে পড়ে এবং একবার যে দ্বীপটিতে যাওয়ার জন্য সবার মন আকুপাকু করে সেটিই মূলত শাহপরীর দ্বীপ।


চমৎকার এই দ্বীপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, খরচের আদ্যেপান্ত, যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় সহ যাতবীয় তথ্য থাকছে এই আলোচনায়। চলুন জেনে আসি সব অজানা তথ্য।

কক্সবাজার থেকে যাত্রাঃ
আমরা শাহপরীর দ্বীপ ঘুরতে গিয়েছিলাম চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ তারিখ। সমুদ্রে নিম্ন চাপ থাকায় কক্সবাজারে তখন প্রচন্ড বৃষ্টি ছিলো। সকালে কক্সবাজার থেকে রওয়া দেওয়ার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও বৃষ্টির কারণে আমরা বের হই সকাল ১১ টায়। মেরিন ড্রাইভের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমাদের রিজার্ভ সিএনজি এগিয়ে চললো টেকনাফের দিকে। চলতি পথে আমরা পেয়েছি হিমছড়ি বীচ, পাটুয়ারটেক বীচ, ইননী বীচ, শামলাপুর বীচসহ অসংখ্য সুন্দর সুন্দর পয়েন্ট। একপাশে সবুজঘেরা পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং অপর পাশে সাগরের গর্জন। এই সৌন্দর্য কেবল আপনারা মেরিন ড্রাইভেই পাবেন। 

শাপলাপুর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের একটি চমৎকার ভিডিও রয়েছে, চাইলে দেখে নিতে পারেন নিচের ভিডিও থেকে-

ভিডিওঃ শাপলাপুর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, যাওয়ার উপায়, খরচের বিস্তারিত

দেখতে দেখতে আমরা চলে আসলাম মেরিন ড্রাইভ সড়কের জিরো পয়েন্টে। কক্সবাজার থেকে এর দূরত্ব ৮৮ কিলোমিটার। এখান থেকে শাহপরীর দ্বীপের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার।

প্রায় ২.৩০ ঘন্টা জার্নির পর আমরা এসে পৌছালাম শাহপরীর দ্বীপ সংলগ্ন জেটি ঘাটে। এই জেটি ঘাটটিই সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে জাহাজ থেকে পর্যটকদের চোখে পড়ে। এখান থেকে নাফ নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়ে এবং এই জেটির ডান পাশেই শাহপরীর দ্বীপের অবস্থান।

শাহপরীর দ্বীপের সৌন্দয্যঃ
হেটে হেটে আমাদের গন্তব্য শাহপরীর দ্বীপের দিকে। ভাটার কারণে অসংখ্য সাম্পান নৌকা এবং টলার তীরে অবস্থান করছে। এই দ্বীপে আসলে আপনারা কিছুটা সেন্টমার্টিনের ফিল পাবেন। এই দ্বীপের মানুষের জীবন যাপন খুবই কঠিন। তাদের জীবিকার মূল উৎস মূলত সামুদ্রিক মাছ শীকার। এই দ্বীপের মানুষ প্রতিনিয়তই সামুদ্রিক নানান প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে টিকে রয়েছে। দ্বীপের ঠিক মাঝ অংশে কোন দোকানপাঠ নেই। নির্মিত হচ্ছে নতুন বেড়িবাধ। এটি সাম্প্রতিক সময়ে শাহপরীর দ্বীপের এক অনন্য সৃষ্টি। 

শাহপরীর দ্বীপ সংলগ্ন বেড়িবাধঃ
এই বেড়িবাধটি এক কথায় অনন্য। যেকোন পর্যটক এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে বাধ্য। এখান থেকেই সমগ্র শাহপরীর দ্বীপটি দেখা যায়। এই দ্বীপটি মূলত টেকনাফের সর্ব দক্ষিণে ভূ-ভাগের খুবই নিকটবর্তী একটি দ্বীপ। এই দ্বীপের বাম পাশে নাফ নদী। নদীর ঐ পারে বার্মা বা মায়ানমার সীমান্ত।

শাহপরীর দ্বীপের নামকরণঃ
এর নামকরন সম্পর্কে কেউ বলেন সম্রাট শাহ সুজার ‘শাহ’ আর তাঁর স্ত্রী পরীবানুর ‘পরী’ মিলিয়ে নামকরণ হয়েছিল এই দ্বীপের। কারো মতে ‘শাহ ফরিদ’ আউলিয়ার নামে দ্বীপের নাম করণ হয়েছে। অপরদিকে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি সা’বারিদ খাঁ’র ‘হানিফা ও কয়রাপরী’ কাব্য গ্রন্থের অন্যতম চরিত্র ‘শাহপরী’। রোখাম রাজ্যের রাণী কয়রাপরীর মেয়ে শাহপরীর নামেই দ্বীপের নামকরণ হয়েছে বলেও অনেকে বলেন।

শাহপরীর দ্বীপের  আয়তনঃ
স্বাধীনতার আগে শাহপরীর দ্বীপের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ছোট হয়ে দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৩ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এটি সংকেত দেয় যে, যেকোন সময় সমুদ্রে বিলীন হতে পারে চমৎকার এই শাহপরীর দ্বীপ।

ভ্রমণের মোট খরচঃ
কক্সবাজার থেকে একদিনেই এই দ্বীপটি ঘুরে দেখা সম্ভব। আমাদের রিজার্ভ সিএনজির ভাড়া পড়েছিলো ৩০০০ টাকা। আমরা ৩ জন হওয়ায় মাথাপিছু আমাদের মাত্র ১০০০ টাকা খরচ পড়েছিলো। 

পরামর্শঃ
এই দ্বীপ ভ্রমণের উত্তম সময় আগষ্ট থেকে নভেম্বর। তখন সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং প্রকৃতি সবুজ থাকায় এর প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

সর্তকবার্তাঃ
যেহেতু এটি বর্ডার এরিয়া, তাই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন NID, অন্যান্য পরিচয় পত্র থাকলে সাথে রাখুন। ফেরার পথে BGB চেকপোস্টে চেকিং এবং জিঞ্জাসাবাধ করতে পারে।

________________________________________________________________________________________________________
লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে পারেন এবং এইরকম গোছানো নতুন নতুন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে আমাদের YouTube চ্যানেল- 
Learning and Traveling ক্লিক করে Subscribe করতে পারেন। কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.